Description
ভূমিকা
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম।
খুবই ইচ্ছা ছিল অস্ত্র নিয়ে সরাসরি যুদ্ধ করার; কিন্তু আমার অধিনায়ক আমার ১০০ পাউন্ড ওজনের শীর্ণকায় শরীরকাঠামোয় সম্মুখযুদ্ধের বদলে মুক্তিবাহিনীর মুখপত্র ‘জাগ্রত বাংলায়’ কাজ করতে বলেন। তাঁরই নির্দেশে পত্রিকা প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়া। ‘জাগ্রত বাংলা’ তখন চতুর্থ সংখ্যা সম্পন্নের পর্যায়ে। সহকর্মী হিসেবে পাই আবুল কালাম আজাদ, আবদুল খালেক ও মাসুদ আলীকে। তিনজনই ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার ডাকাতিয়ার অধিবাসী। আবুল কালাম আজাদ ভূয়াপুর কলেজের ছাত্র। আবদুল খালেক করটিয়া সাদত কলেজ ও মাসুদ আলী ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্র।
‘জাগ্রত বাংলা’য় পঞ্চম সংখ্যা থেকে বিজয় দিবসা পর্যন্ত প্রকাশিত সংখ্যাগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিলাম। স্টেনসিল পেপারে সংবাদ লেখা, ছাপানোর পর গোছানো ইত্যাদি কাজের ভেতর দিয়ে সময় কাটিয়েছি। সপ্তম সংখ্যা প্রকাশের প্রাক্কালে যুক্ত হন আরও তিনজন—মসিহউদ্দিন শাকের, রমিজউদ্দিন ও জাকের।
আমরা সবাই মিলে সব সময় কাজ করেছি। একপর্যায়ে এলো ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম পত্রিকা হিসেবে প্রকাশের কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য আমরা সযত্ন প্রয়াস চালাই। ১৬ ডিসেম্বরের সকালেই আমরা প্রকাশ করতে সক্ষম হই, যা মনে হয় স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম প্রকাশিত পত্রিকা।
পত্রিকা প্রকাশের আনন্দ, গর্বের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয় ধরে রাখার জন্য সব কয়টি সংখ্যার কপি নিজের সংগ্রহে রাখি। সঙ্গে রাখি আমাদের অধিনায়ক আফসারের লেখা সংবাদের খসড়া। আমাদের নিজেদের লেখা খসড়া, সঙ্গে যুক্ত হয় কাদের সিদ্দিকীর পাঠানো ‘জয় বাংলা’ পত্রিকা ও কাদেরিয়া বাহিনীর প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক রণাঙ্গন’।
যুদ্ধজুড়ে একটা দেশের ছবি আঁকতাম—স্বাধীন বাংলাদেশের ছবি—অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ছবি—সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের ছবি। ১৬ ডিসেম্বর একাত্তরে বিজয়ের ভেতর দিয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়নের এক ধাপ এগিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, বাহাত্তরের সংবিধান ইত্যাদি ঘটনার সংযোজনে আমার কিশোর-মন ছিল উজ্জীবিত। তারপর ক্রমে সময় পেরিয়ে যায়। স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের অবস্থান যোজন যোজন দূরত্বের সৃষ্টি করে।...
—ডা. শফিকুল ইসলাম
1 review for Muktijuddher Shabdasainik